ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে আজকে কথা বলবো। আমাদের মধ্যে অনেকেরই এই বিষন্নতা ধীরে ধীরে অসুস্থতায় পরিণত হয়।
ডিপ্রেশন কী?
ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা এক ধরনের অসুস্থতা বা ব্যাধি যা শরীর, মেজাজ ও চিন্তার সাথে জড়িত থাকে। এটি দৈহিক জীবন, স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপে হস্তক্ষেপ করে এবং ব্যাধিযুক্ত ব্যক্তি এবং যারা তার যত্ন করে উভয়ের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে।
ডিপ্রেশন এর লক্ষণ
সব সময় মন খারাপ থাকাকে আমরা ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা বলতে পারি না। সেজন্য চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুযায়ী আমাদের সেই লক্ষণগুলো জানতে হবে।
- অস্থিরতা বা বিরক্তি।
- ক্রমাগত দুঃখিত, উদ্বিগ্ন বা খারাপ মেজাজ বোধ করা।
- হতাশা বা নিন্দা, অপরাধবোধ, মূল্যহীনতা বা আশাহীনতার অনুভূতি।
- মনোযোগ, মনে রাখা বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমস্যা।
- অনিদ্রা, ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠা।
- ক্ষুধা ও ওজন কমে যাওয়া, বা অতিরিক্ত খাওয়া এবং ওজন বৃদ্ধি।
- মৃত্যু বা আত্মহত্যার চিন্তা, আত্মহত্যার চেষ্টা।
আরো পড়তে পারেন: ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি জেনে নিন
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায়
যেহেতু ডিপ্রেশন একটি মানসিক ব্যাধি, তাই প্রথমে আমাদের উচিত নিজে থেকেই ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করা।
নিজে থেকে ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে আসতে যেসব বিষয় ফলো বা চর্চা করতে পারি:
১. বাস্তববাদী লক্ষ্য ঠিক করুন
ডিপ্রেশন থেকে নিজেকে দূরে রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল নিজেকে ব্যস্ত রাখা। তাই হালকা ধরনের, সহজ, ছোট-খাট, এক বা দুই দিনের লক্ষ্য আমাদের সাহায্য করতে পারে।
সেই সাথে একটি যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ দায়িত্ব গ্রহণ। কারণ, কাজে ব্যস্ত থাকলে আমরা আমাদের অপ্রয়োজনীয় সমস্যার দিকে কম মনোযোগ দিতে পারব।
কোনো কারণে আমাদের ভালো না খারাপ লাগছে তা বোঝার জন্যও আমাদের সময় দরকার। সেই সময়টাতে যদি আমরা নিজেদের ব্যস্ত রাখি, তাহলে তা আমাদের ডিপ্রেশন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
২. প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো
ডিপ্রেশনে থাকলে একা থাকার চেয়ে আমরা যাদের সাথে থাকতে উপভোগ করি বা যাদের সাথে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি তাদের সাথে সময় কাটানো উচিত।
আমাদের এমন অনেক বন্ধুমহলই থাকে যাদের সাথে কখনো মন খারাপ করে থাকা যায় না বরং সেখানে সব সময় হাসি-ঠাট্টা হয়। এই ধরনের বন্ধুদের বৃত্তের সাথে সময় কাটানো আমাদের সময় এবং মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।
এমনকি বিষণ্ণতার কারণ সম্পর্কে তাদের সাথে কথা বললে ভালো লাগতে পারে। আপনজনদের সাথে সাথে গল্প গুজব করাও মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট।
৩. পজিটিভিটি খোঁজা
ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতার প্রথম শর্তই হচ্ছে সবকিছুর খারাপ দিক নিয়ে চিন্তা করা, নেতিবাচকতা খোঁজা। হয়তো, আমরা জানি যে এই কাজটি আমরা করতে পারব তারপরও শুধুমাত্র ডিপ্রেশনের কারণে আমরা এর খারাপ দিক সম্পর্কে চিন্তা করতে শুরু করি।
৪. স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া
হার্ভার্ড মেডিকেল কলেজের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, একটি স্বাস্থ্যকর ডায়েট বিষণ্ণতা থেকে উত্তরণে বা মন ভাল রাখতে সাহায্য করে।
এমনকি এটাও দেখা গেছে যে কিছু ময়দার আটা জাতীয় খাবার ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এজন্য ডিপ্রেশন দূরীকরণে আমাদের দৈনন্দিন খাবারের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
৫. শরীরচর্চা বা ধ্যান করা
আমরা সকলেই জানি যে আমাদের শরীর এবং মন পরস্পর সংযুক্ত। তাই আমাদের মন ভালো রাখতে আমাদের অবশ্যই সুস্থ শরীর বজায় রেখে চলতে হবে। এজন্য সঠিক ডায়েটের পাশাপাশি আমাদের মেডিটেশন বা শারীরিক ব্যায়াম করতে হবে।
৬. প্রার্থনা
প্রতিটি মানু্ষই বাঁচে আশার মাধ্যমে। আর এই আশা পূর্ণ হয় বিশ্বাসের মাধ্যমে। এই বিশ্বাস ধর্মের প্রতি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি।
সাধারণত মানুষ যখন ডিপ্রেশন ভোগে তখন তাদের আশার বিঘ্ন ঘটে যার ফলে তারা ধীরে ধীরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করে। এমন সময় সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ, নিজের বিশ্বাসকে শক্ত করার মাধ্যমে মানুষ শক্তি খুঁজে পায়।
৭. প্রকৃতি উপভোগ করা
মানু্ষের মনের সাথে প্রকৃতির সম্পর্ক আদিকাল থেকেই। আবহাওয়ার সামান্য পরির্বতন মানুষের মনে যেভাবে দোলা দেয় সেইভাবে তা ডিপ্রেশন কাটিয়ে উঠতেও সাহায্য করে। সুন্দর কোন প্রাকৃতিক জায়গায় গিয়ে মানু্ষ চায় সবকিছু কিছুক্ষণের জন্যে ভুলে প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে। এইভাবে প্রাকৃতিক জায়গায় ঘুরতে যাওয়াও ডিপ্রেশন কাটাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
৮. ধৈর্য ধারণ
ডিপ্রেশনের সময়ে আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি হল ধৈর্য ধারণ। আমাদের অন্তরে বিশ্বাস করতে হবে যে সবকিছুর সমাধান আছে এবং সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।
প্রতিটি কাজে বিশ্বাস ও ধৈর্যের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের এতটুকু মাথায় রাখতে হবে যে, ডিপ্রেশন রাতারাতি দূর হবে না। মনের শান্তি ধীরে ধীরে আসবে। ডিপ্রেশন কমে যাবে।
তথ্যসূত্রঃ টেন মিনিট স্কুল
ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় | বিষন্নতা রোধে ইসলামের শিক্ষা
গবেষণায় দেখা গেছে যে ধর্মীয় অনুভূতি এবং বিশ্বাস মানুষকে মানসিক চাপ থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে।
আধুনিক চিকিৎসাবিদরা মানসিক কষ্ট বা মর্মযাতনা দূর করার জন্য ধর্মীয় মূল্যবোধগুলোকে ব্যক্তি মনে দৃঢ়ভাবে স্থাপনের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
সূরা বাকারার ১৫৬ আয়াতে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা আল্লাহর ওপর বিশ্বাসী তারা যেকোনো বিপদ আপদের সময় এই সত্য ও বাস্তবতার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করে বলে যে, আমরা আল্লাহর জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।’
আপনি মানসিক ভাবে বিপদগ্রস্ত হলে মহান আল্লাহর কাছে নিজেকে শপে দিন। বেশি বেশি ইবাদাত করতে থাকুন দেখবেন খুব সহজেই আপনি ডিপ্রেশন থেকে বের হয়ে এসেছেন।
শেষ কথাঃ ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির উপায় এর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকরি উপায় হলো একটি লক্ষ্য ঠিক করে সেই লক্ষে পোঁছানোর জন্য সময় কাজে লাগানো। আর নিজের ধর্মীয় বিষয়ে মনোযোগী হওয়া।
নিজেকে খুশি রাখতে যে কাজ গুলো পছন্দের তা করা। তবে মনে রাখবেন অপ্রয়োজনীয় কোনো কাজে সময় অপচয় একদমই করা যাবে না।