স্বাভাবিক ব্যথা এবং ক্যান্সারের লক্ষণগুলির মধ্যে পার্থক্য জানা অপরিহার্য। বেশিরভাগ সময়, পুরুষদের ক্যান্সার তার প্রাথমিক পর্যায়ে সনাক্ত করা হয় না। কারণ ক্যান্সারের লক্ষণগুলোকে প্রায়ই ছোটখাটো সমস্যার লক্ষণ হিসেবে উপেক্ষা করা হয়। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারের লক্ষণ ধরা পড়লে ক্যান্সার সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। আজকে জেনে নিবো পুরুষদের ক্যান্সারের ৪ টি লক্ষণ গুলো কি কি।
ক্যান্সার কি?
মানবদেহ অনেক ছোট ছোট কোষ দিয়ে গঠিত। এই কোষগুলোর মতোই একটি কোষ হল ক্যান্সার, তবে এই কোষটি অন্য কোষের মতো সাধারণ কোষ নয়। ক্যান্সারের কোষ অন্য কোষের চেয়ে অস্বাভাবিক কার্য করে এবং এর আকারও অস্বাভাবিক হয়। অজ্ঞাত কারণেই মানবদেহের কোনো কোষ হঠাৎ করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বিভাজন হতে শুরু করে এবং তা চলতেই থাকে। ফলে এক সময় এটি পিন্ড বা টিউমারে পরিণত হয়। আর এই পিন্ড বা টিউমারটিই হয় ক্যান্সার।
আরো পড়তে পারেন: ডায়াবেটিস কমানোর উপায় কি জেনে নিন
পুরুষদের ক্যান্সারের ৪ টি লক্ষণ
পুরুষদের ক্যান্সারের আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বিশ্রামের অভ্যাসে পরিবর্তন, খাবার গিলতে সমস্যা, গলার স্বর কর্কশ বা ফ্যাঁসফেঁসে হয়ে যাওয়া, অজানা কারণে ওজন কমে যাওয়া, মুখের পরিবর্তন এবং পাকস্থলী বা তলপেটে ব্যথা প্রভৃতি।
১. প্রস্রাবে পরিবর্তন
প্রস্রাবের প্রবাহের পরিবর্তন যা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে: প্রস্রাবের প্রবাহ শুরু করতে সমস্যা, প্রস্রাবের প্রবাহ বন্ধ করতে সমস্যা, স্বাভাবিকের চেয়ে দুর্বল প্রস্রাবের স্রোত, প্রস্রাব ঝরা বা চুইয়ে পড়া, দিনে কতবার প্রস্রাব করা হচ্ছে সেই হার-এ পরিবর্তন, অণ্ডকোষের অথবা অন্ডকোষের ভেতরের মাংসপিণ্ডের আকার এর স্ফীতি বা সংকোচন, অণ্ডকোষের ওজন বৃদ্ধি এবং লিঙ্গোত্থানে সমস্যা।
২. মুখের পরিবর্তন
মুখ ও গলার পরিবর্তন যা ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে: মুখের ভেতরে সাদা দাগ (গোলাকার দাগ বা লম্বা দাগ), মুখে এবং গলায় অনবরত ব্যথা, খাবার গিলতে সমস্যা, নিচের চোয়াল নাড়াতে সমস্যা, অজানা কারণে দাঁত নড়বড়ে হওয়া বা উঠে আসা, মুখ ফুলে যাওয়া, ঠোঁটের অসাড়তা বা অতি সংবেদনশীলতা, গালের ভেতরে বা জিহ্বায় ক্ষত ও ঘাঁ অথবা জিহ্বা থেকে রক্ত পড়া, অনবরত কফ-কাশি বা স্বরভঙ্গ এবং কফের সঙ্গে রক্ত বের হওয়া।
৩. স্তনের পরিবর্তন
পুরুষদের স্তন ক্যান্সার খুবই বিরল। যত স্তন ক্যান্সার হয় তার মাত্র ১% হয় পুরুষদের স্তনে। আর এ কারণেই স্তন ক্যানসারের উপসর্গকে উপেক্ষা করেন পুরুষরা। পুরুষদের স্তন ক্যান্সার হয় মূলত ইস্ট্রোজেন হরমোনের উচ্চ মাত্রা, ক্ষতিকর বিকিরণ বা পারিবারিকভাবে স্তন ক্যান্সারের ইতিহাস থাকলে।
পুরুষদের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণগুলি হলো: স্তন আকার বড় হওয়া, স্তনের বোটায় ব্যথা, স্তনবৃন্তের সংকোচন বা ওল্টানো অবস্থা, স্তনবৃন্তে ক্ষত, স্তনবৃন্তের চারপাশে গোলকার লালচে হওয়া বা মাংসপিণ্ড যাতে ব্যথা নাও থাকতে পারে, স্তনবৃন্ত থেকে তরল নিঃসরিত হওয়া যা দেখতে পানির মতো, কালো বা রক্তাভ হতে পারে, বাহুর নিচের লসিকাগ্রন্থি বেড়ে যাওয়া, স্তনবৃন্ত বা এর চারপাশে লালভাব হয়ে যাওয়া।
৪. পাকস্থলি সংশ্লিষ্ট লক্ষণসমূহ
পাকস্থলিতে এবং পেটের ব্যথা হতে পারে নানা কারণে। কিন্তু ব্যথা কমানোর ব্যবস্থা নেওয়ার পরও যদি ব্যথা না যায়, তাহলে তা ক্যান্সারের লক্ষণও হতে পারে।
পাকস্থলীর ক্যান্সারের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে: ক্ষুধা হ্রাস, দীর্ঘমেয়াদি এসিডিটি, বুক জ্বালাপোড়া (পাকস্থলি বা গলার ক্যান্সারের লক্ষণ), বমি- রক্তসহ বা ছাড়া, পেট ফোলা, বা পেটে তরল জমা হওয়া, পাকস্থলিতে ব্যথা যা হতে পারে ভেতরের দিকে চাপ প্রয়োগ করার অনুভূতিযুক্ত (অগ্নাশয় ক্যান্সার), পাকস্থলিতে খিচুনি এবং অস্বস্তি (লিভার ক্যান্সার), অল্প খাবারেই পেট ভরে যাওয়া, প্রস্রাব বা পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া (কিডনি বা মূত্রাশয় ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার)।
ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
বিশেষজ্ঞরা এখনও নিশ্চিত নন যে কী কারণে ক্যান্সার হয়। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। আসুন জেনে নিই ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়।
- ক্যান্সার প্রতিরোধের প্রথম শর্ত হল ধূমপান না করা। ধূমপান বন্ধ করলে এই রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
- জর্দা, গুল ইত্যাদি পণ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
- প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন। অন্তত আধা ঘণ্টা হাঁটা ও ব্যায়াম করা উচিত।
- বিভিন্ন ভাইরাসের সংক্রমণেও ক্যান্সার হতে পারে। তাই এ ক্ষেত্রে অ্যান্টি-ভাইরাস ভ্যাকসিন নিতে পারেন।
- বংশগত ভাবে ক্যান্সার রোগ অতীতে কারও হয়ে থাকলে নিয়মিত ক্যান্সার পরীক্ষা করান।
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান এবং প্রচুর পানি পান করুন।
- সব ধরনের মাদক এড়িয়ে চলুন।
উপরের নিয়মগুলো মেনে চললে ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যাবে। এছাড়াও, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা ভাল।
আমরা সবাই জানি যে ক্যান্সার একটি জটিল এবং মারাত্মক রোগ। যেহেতু এই রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ নেই, তাই এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে নিয়ম মেনে চলতে হবে। এছাড়াও, ধূমপান এবং মদ্যপানের মতো খারাপ অভ্যাসগুলি এড়ানো উচিত। নিয়ম মেনে চলুন আপনার জীবন সুন্দর ও ক্যান্সারমুক্ত হবে।