স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায় নিয়ে আজকে আলোচনা করব। স্বপ্নদোষ কেন হয় এবং স্বপ্নদোষের প্রতিকার জানবো বিস্তারিত।
স্বপ্নদোষ যেমন রোগ নয় ঠিক, তেমনি রোগের পর্যায়ে ফেলা যায় না। সাধারণভাবে কোনো পুরুষ ব্যক্তির যৌবন আগমনের পর প্রাকৃতিকভাবেই মাসে দু’একবার শরীর থেকে বীর্য বের হয়ে যায়।
স্বপ্নদোষ কি?
স্বপ্নের মাধ্যমে শরীর থেকে বীর্য বের হয়ে যাওযাকে স্বপ্নদোষ বলা হয়।

স্বপ্নদোষ কেন হয়?
স্বপ্নদোষ মূলত বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের আধিক্যের জন্য হয়ে থাকে। নীল ছবিসমূহের প্রতি আসক্ত ও খারাপ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করে ঘুমালে স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে।
১। বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের আধিক্যের জন্য।
২। খারাপ বিষয় সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা।
৩। নীল ছবিসমূহের প্রতি আসক্ত হওয়া।
৪। খারাপ জাতীয় বই পড়া।
৫। ঘুমাতে যাওয়ার আগে খারাপ বিষয় চিন্তা করা বা দেখা।
৬। হরমোনগত জন্যই উত্তেজনা বেশি হয়।
৭। মদ্যপান, নেশা সেবন ও বেশি পরিমাণে উত্তেজক খাদ্য গ্রহণ।
৮। সকালের দিকে মূত্রথলিতে বেশি মূত্র সঞ্চয় ও তার ফলে শুক্র স্থিতিতে চাপ পড়ার কারণে।
স্বপ্নদোষ বোঝার সহজ উপায় স্বাভাবিকভাবে বা পরিমাণমতো এটি হলে তা রোগ নয়, তবে বেশি হলে তা খারাপ লক্ষণ দেখা দেয়।
স্বপ্নদোষের খারাপ দিক বা অপকারিতা
- ঘনঘন স্বপ্নদোষ বেশি হতে থাকলে, ফলে দেহ দুর্বল হবে।
- চোখের কোণে কালো দাগ পড়বে।
- চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাবে।
- বুক ধড়ফড় করার পাশাপাশি মাথা ঘোরবে।
- কাজ করার শক্তি কমে যাবে।
- কাজের মধ্যে বিরক্তি ও স্মরণশক্তি কমে যাবে।
- মানসিক চাপ বোধ প্রভৃতি দেখা যাবে। ফলে মানসিক কারণে দেহের ক্ষতিও হতে পারে।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায় | স্বপ্নদোষের প্রতিকার ও চিকিৎসা
সাধারণত স্বপ্নদোষের কোনো প্রতিকার ও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে এটি অতি মাত্রাতিরিক্ত মাত্রায় হতে থাকে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
১. ব্যায়াম পুরুষের শরীর, মন ও মস্তিষ্কের ওপর সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। দৈনিক ব্যায়াম করার ফলে যেসব যৌনকর্ম যা করলে আপনার স্বপ্নদোষ হতে পারে, আপনি তা নিজে কাজের মাধ্যমে আটকাতে পারবেন।
২. খাদ্য তালিকার রুটিন বদল করলে স্বপ্নদোষ আটকানো যায়। যেসব পুরুষদের স্বপ্নদোষ হয়, তারা আম্লিক খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৩. ধ্যান করলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায় ও ভিতরের অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা যায়। ফলে পুরুষেরা হস্তমৈথুন করা থেকে নিজেদের আটকাতে পারবেন এবং স্বপ্নদোষ বন্ধ করার জন্য খুবই উপকারি।
৪. ঘুমাতে যাওয়ার আগে মূত্র ত্যাগ করে নেবেন। যদিও এটি স্বপ্নদোষের চিকিৎসা নয় তবে এটি স্বপ্নদোষের চাপ কমাতে সহযোগিতা করে।
৫. ঘুমানোর সময় উপুড় হয়ে ঘুমাবেন না। যদি আপনার স্বপ্নদোষ হয়ে থাকে এটার অন্যতম কারণ হতে পারে উপুড় হয়ে ঘুমানোর জন্য। তাই সবসময় চিত বা কাত হয়ে ঘুমানো উচিত।
৬. রাতের খাবার খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে যাবেন না। কিছু সময় হাঁটাহাঁটি করুন এবং ঘুমানোর আগে খুব বেশি পরিমাণে জল পান করবেন না।
৮. অশ্লীল কনন্টেট থেকে দূরে থাকুন ও খারাপ ছবি বা ভিডিও থেকে দূরে থাকুন।
৯. উপরের কাজসমূহ নিয়ম মেনে করে যদি রাত্রে ধাতু নির্গমন বন্ধ না হয়, তাহলে আপনাকে Sexologist এর পরামর্শ নিতে হবে। নিখুঁত চিকিৎসা দ্বারা স্বপ্নদোষের মূল কারণ বের করতে হবে ও সেটা নিরাময় করেন, তাহলেই আপনি হারানো শারীরিক শক্তি ও যৌনক্ষমতা ফেরত পাবেন।
স্বপ্নদোষ প্রতিকার করা সহজ। তবে স্বপ্নদোষ চিহ্নিত করা খুবই জরুরি, যাতে পুরুষ ব্যক্তির যৌন-জীবন ব্যাহত না হয়।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করার ঘরোয়া উপায়
প্রথমত জানিয়ে রাখি, স্বপ্নদোষ বন্ধ করার তেমন কোনো বিশেষ বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি পৃথিবীতে আবিষ্কার হয়নি। আর যে চিকিৎসা হয় তা সম্পূর্ণ শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য।
১. লাউ শরীরকে ঠাণ্ডা করার গুণ রয়েছে। যা শরীরকে গরম হতে দেয় না ফলে স্বপ্নদোষকে রুখে দিতে পারে। লাউকে সাধারণত ২টি পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন–
• রাত্রে ঘুমানোর আগে লাউয়ের জুস খেতে পারেন।
• তিলের তেলের সাথে লাউয়ের জুস বা পেস্ট মিশিয়ে এটিকে মালিশ করতে পারেন।
২. আমলার রস শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। প্রতিদিন রাতে আমলকির রস খেলে স্বপ্নদোষের হাত থেকে অনেকটা মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৩. পেঁয়াজ ও রসুন শারীরিক নানা অসুস্থতা সারিয়ে তোলার সক্ষমতা রয়েছে। প্রতিদিন ৪-৫ কোয়া কাঁচা রসুন ও পেঁয়াজ স্যালাড হিসেবে খাওয়া যায় তাহলে স্বপ্নদোষ অনেকটাই কমে যেতে পারে।
৪. ভিজিয়ে রাখা অ্যালমন্ড, কলা ও আদা যদি দুধের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়, তাহলে রাতের বেলায় ধাতু নির্গমনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কলা ও দই শরীর ঠাণ্ডা করার গুণ রয়েছে। যা এই সমস্যার সমাধান করতে সহায়তা করে এবং সেই সাথে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
৫. সেলেরি ও মেথির রস খুবই কার্যকরী বীর্যপাত ও স্বপ্নদোষের ক্ষেত্রে। আবার সেলেরি ও মেথির রস মধুর সাথে সংমিশ্রণ করে খেতে পারেন। যা সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৬. ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ কাপ তুলসী পাতার চা খেলে মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুনজনিত স্বপ্নদোষ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
৭. অশ্বগন্ধা স্বপ্নদোষের সমস্যা উপকার সহ সর্বপোরী যৌন স্বাস্থ্য শুদ্ধি, হরমোন ব্যালেন্স ও হস্তমৈথুনের কারণে দুর্বল হয়ে যাওয়া পেশিশক্তি ফিরে পাওয়া ইত্যাদি সারিয়ে তোলে।
অশ্বগন্ধা সেবনের নিয়ম হল ১ গ্লাস জলে ১ চা চামচের ৪/১ অশ্বগন্ধা গুঁড়া 3-4 ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ বাধ্যতামূলক।
আশা করি আপনি স্বপ্নদোষ বন্ধ করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে গেছেন। স্বপ্নদোষ আপনি চাইলে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
স্বপ্নদোষ বন্ধ করতে উপরের নিয়মগুলো অনুসরণ করুন অভ্যাসের পরিবর্তন হলে স্বপ্নদোষ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।